হাজারী গুড় (Hazari Gur)
বাংলার মাটিতে জন্ম নেওয়া হাজারো মিষ্টান্নের ভিড়ে ঝিটকার হাজারী গুড় এক অনন্য নাম। এটি শুধু গুড় নয়, বরং এক ঐতিহাসিক মিষ্টির পরিচয়, যা মানিকগঞ্জ জেলার ঝিটকা অঞ্চলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তৈরি হয়ে আসছে। এই গুড়কে বলা হয় “গুড়ের রাজা”, আর এই খেতাব একেবারেই উপযুক্ত – কারণ এর স্বাদ, সুগন্ধ ও প্রস্তুত প্রণালী একে সাধারণ গুড় থেকে আলাদা করে তোলে।
প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি খেজুরের রস প্রয়োজন হয় মাত্র এক কেজি হাজারী গুড় তৈরি করতে, যা বোঝায় এর পেছনের শ্রম ও মূল্যের ন্যায্যতা। এই বিশুদ্ধতা ও প্রাকৃতিক প্রস্তুতিই হাজারী গুড়কে করে তোলে অনন্য।
যখন আপনি হাতে নেবেন এক টুকরো হাজারী গুড়, বুঝতে পারবেন এর মোলায়েম গঠন—হালকা চাপে তা ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যায়। আর মুখে দিলেই বোঝা যাবে, এই গুড়ের মিঠে স্বাদ ও প্রাকৃতিক সুগন্ধ কেন এত প্রশংসিত। এটি শুধু একটি খাদ্য নয়, এটি এক স্বাদের অভিজ্ঞতা, যা বারবার মনে করিয়ে দেবে বাংলার শীতকালীন সকালে হাজারী রস পান করার আনন্।
হাজারী গুড় শুধু স্বাদের জন্য নয়, এর পুষ্টিগুণের জন্যও সমাদৃত। এতে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, যা শরীরকে রাখে সতেজ ও মজবুত। নিয়মিত গ্রহণে এটি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, রক্তস্বল্পতা কমায় এবং ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে শীতকাল এলেই বাজারে হাজির হয় হাজারী গুড়, তবে শুধু দেশেই নয়, আজ এই গুড় বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রবাসীদের হাত ধরে পৌঁছে গেছে বিদেশে। ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারেও এখন দেখা যায় ‘Manikganj Hajari Gur’ নামে প্যাকেটজাত গুড়ের জনপ্রিয়তা। এর পেছনের কারণ একটাই—অন্য কোনো গুড় এতো খাঁটি, এতো স্বাদযুক্ত এবং এত সুন্দরভাবে প্রস্তুত হয় না।
মানিকগঞ্জের ঝিটকা যেন এক মিষ্টির তীর্থভূমি, আর হাজারী গুড় তার প্রধান দেবতা। এর প্রতিটি টুকরো বহন করে প্রকৃতি, শ্রম, ভালোবাসা ও ঐতিহ্যের ছাপ। আমরা যারা এই গুড়ের স্বাদ একবার পেয়েছি, তারা জানি—এটি বারবার ফিরে আসার মতো এক অভিজ্ঞতা।
আপনি যদি এখনো হাজারী গুড়ের স্বাদ না নিয়ে থাকেন, তবে আপনি বাংলাদেশের শীতকালীন ঐতিহ্যের একটি অমূল্য অংশ মিস করছেন।
No review given yet!